- সাংবাদিকের উপর হামলার প্রতিবাদে কাপাসিয়ায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা
কাপাসিয়া প্রতিনিধি: গাজীপুরের বাড়িয়া ইউনিয়নের রুশাদিয়া গ্রামে ৪সাংবাদিকের উপর হামলার প্রতিবাদে কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের উদ্যোগে শনিবার সকালে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানা যায়, গাজীপুরের সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার একটি বিরোধপূর্ণ মাছের প্রজেক্ট ও বাঁধ পরিদর্শনে গত ২ মার্চ সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়ার পর বাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিবের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের উপর হামলা চালান। এসময় একাত্তর টিভি ও দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ইকবাল আহমেদ সরকার, আর টিভির গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার আজহারুল হক, মোহনা টিবির গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি আতিকুর রহমান ও মানবকণ্ঠ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি শামসুল হক ভুঁইয়া, নুরুসহ কয়েকজন আহত হন।
সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে কাপাসিয়া প্রেসক্লাব এবং কাপাসিয়া প্রেস কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ শনিবার সকালে প্রেসক্লাব চত্বরে এক মানববন্ধন করেছে। পরে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা সদরে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে এবং প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সঞ্জীব কুমার দাসের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক বেলায়েত হোসেন শামীমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর জেলা সাংবাদিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুছা খান রানা, কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এফ এম কামাল হোসেন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন, মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি আতিকুর রহমান, সাইফুল ইসলাম শাহীন, জাকির হোসেন কামাল, শাকিল হাসান, দৈনিক মানবজমিনের মজিবুর রহমান মিলন, আব্দুল কাইয়ুম, সফিউদ্দিন আহমেদ জিন্নাহ, খোরশেদ আলম, মাসুদ পারভেজ, মজিবুর রহমান, নজরুল ইসলাম, আকরাম হোসেন রিপন, গোলাম সারোয়ার, সমির বনিক, শরিফ সিকদার, এস এম লবিব, মাসুদ শেখ, জাহাঙ্গীর আলম, আনিসুল ইসলাম, উত্তম কুমার দাস, নিয়ামল হাসান, সাইদুল ইসলাম রনি, মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অবিলম্বে আসামীদের গ্রেফতার করতে হবে। অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ কলম বিরতি সহ বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান খানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী ওই সময়ে আহত হওয়া চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান খানের চাচাত ভাই নুরু খান। তবে এখনো কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও সকল স্তরের সামাজিকরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আহত সাংবাদিকরা জানান, গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়ীয়া ইউনিয়নের চিলনী, রোসাদিয়া ও কুমুন এলাকায় স্থানীয় লোকজনের বিলের জমি ঘিরে নির্মিত একটি বাঁধ কেটে দিয়ে কৃষকের জমি ও খাল অবমুক্ত করার দাবি জানিয়ে গ্রামবাসীদের পক্ষে দুই শতাধিক লোকজনের স্বাক্ষরসহ উপজেলা প্রশাসনে আবেদন জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির কাছেও সহযোগিতা চেয়েছেন। এ বিষয়ে গত সপ্তাহের দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় ও আজকের গাজীপুর পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এছাড়া ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এ নিয়ে মানববন্ধনের খবর মাই টিভিসহ বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচারিত হয়। গত বুধবার রাতেও বাধ নিয়ে ভুক্তভোগী কয়েকজন সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকির সঙ্গে দেখা করেন। এরপর রাতে গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোরাদ আলী সাংবাদিক ইকবাল আহমদ সরকারকে ফোন দিয়ে জানান, তিনি সকালে বাড়ীয়ার ঘটনাস্থলে যাবেন এবং সাংবাদিককে ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুরোধ জানান। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল দশটার দিকেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফোন দিয়ে ওই সাংবাদিককে বলেন, আমি উপজেলা থেকে রওনা দিচ্ছি আপনারাও চলে আসুন। এরপর তাদের সাথে ঘটনাস্থলে গেলে এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের আগে প্রকাশিত ও প্রচারিত রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে মারধর করা হয়। এঘটনার সময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোরাদ আলী ও উপজেলা প্রকল্প পরিচালক কুতুব উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। আহত সাংবাদিকরা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। তাদের সাথে আহত হওয়া স্থানীয় নুরু খান বাদি হয়ে বাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের হাবিবুর রহমান খান, মাইদুল ইসলাম, সফিজ উদ্দিন ওরফে সাফি, সবুজ, মোবারক খান ও কাঞ্চনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোরাদ আলী জানান, তিনি বুঝে উঠতে পারেননি এমন নেক্কারজনক জন্য ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এ বিষয়ে আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।