কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খাল,বিল,নালা,নর্দমা,জলধারা ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ,রাস্তা তৈরি, পুকুর খনন সহ নানা কারণে দিন দিন বাড়ছে জলাবদ্ধতা। একসময় জলাবদ্ধতার সমস্যা শহর কেন্দ্রিক হলেও বর্তমানে গ্রামাঞ্চলেও এ সমস্যা যেন দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। অনেক গ্রাম মহল্লায় জলাবদ্ধতা একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ঘিঘাট, গোসাইরগাঁও, বাড়ৈগাঁও, নাশেরা গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা পানি নিষ্কাশনের পথগুলো ভরাট করে সেখানে অপরিকল্পিত ভাবে বাড়িঘর, পুকুর, রাস্তা নির্মাণ হয়েছে। এর ফলে সে সব এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ঘিঘাট, গোসাইর গাওঁ গ্রামে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। একসময় শীতলক্ষ্যা নদীতে এসব গ্রামের পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রাকৃতিক খাল, নালা ছিল। বর্তমানে প্রকৃতি খাল, নালাগুলোর বেশিরভাগই ভরাট হয়ে গেছে। সেখানে গড়ে উঠেছে বাড়ি, পুকুর, রাস্তা। জলাবদ্ধতার কারণে জনদুর্ভোগ সহ কৃষি ফসল ও ফল বাগানের ও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
ঘিঘাট গ্রামের হারুন ফকির ও ফরিদ বক্স প্রধান জনি জানান, কয়েক দশক আগেও ঘিঘাট, গোসাইর গাঁও গ্রামে প্রাকৃতিক খাল,নালা ছিল। বৃষ্টি হলেই খাল, নালা দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ছিল।এলাকার মানুষ বৃষ্টি হলে খালের গতি প্রবাহে জাল দিয়ে মাছ ধরতো। আজ সেই পানি প্রবাহ নেই। এখন পানি প্রবাহের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। কেউ কেউ খাল, নালা ভরাট করে বাড়ি বানিয়েছে, কেউ কেটেছে পুকুর। পুকুরের পাড় তৈরির ফলে পানির গতিপথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গোসাইর গাঁও হাফিজিয়া মাদ্রাসার পাশ দিয়ে যে খালটি শীতলক্ষ্যা নদীতে গিয়ে মিশেছে। সেই খাল আজ বেদখল, ভরাট হয়ে গেছে। এসব কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘিঘাট, গোসাইর গাঁও গ্রামের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বর্ষায় প্রবল ঢলে পানিবন্ধি হয়ে পড়ে মানুষ। তাঁরা এসব খাল ও পানি নিষ্কাশনের স্থান গুলো পুনরুদ্ধারের জোড়ালো দাবী জানান।
কাপাসিয়া উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের বৃহত্তর বিল নলিবিল। এই নলিবিলের সাথে ঘাটকুড়ি খালের সংযোগ ছিল। ঘাটকুড়ি খালের গতি প্রবাহ আজ যেন বিলীনের পথে । খালটি দখল ও ভরাটের শিকার হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে গিয়ে নলিবিল কচুরিপানায় ভরে যায়। বর্ষায় নলীবিলের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এ অবস্থায় নলিবিলে শত শত বিঘা জমি থাকে অনাবাদি। দখল – ভরাটের শিকার হয়ে দুর্গাপুর ইউনিয়নের পাতালিয়া খালটির আজ অস্তিত্ব বিলীনের পথে । এর ফলে বেগুনহাটি, দেইলগাঁও, বাড়ৈগাঁও, খিলগাঁও, নাশেরা, দড়িনাশেরা গ্রামের বিভিন্ন বিলের পানি নিষ্কাশনের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল গাফফার জানান, দখল হওয়া ও ভরাট হওয়া খাল জনস্বার্থে উদ্ধার করা প্রয়োজন। কাপাসিয়া উপজেলার আদালত পাড়া, সাফাইশ্রী মোড়, কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন রাস্তা, তারাগঞ্জ বাজার মোড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় মানুষের চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে।
তাছাড়া উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জনদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা আজ যেন সময়ের জনগুরুত্বপূর্ণ দাবী হয়ে দাড়িয়েছে।