অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটনঃ বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। খাল- বিল,ডোবা-নালা, জলাশয়, নদ- নদী বেষ্টিত আমাদের এই দেশ। কিন্তু কচুরিপানার কারণে প্রতি বছর খাল- বিল আর জলভূমির ফসল বিশেষ করে আমন ধান আর পাট চাষ অসম্ভব হয়ে পড়ে। কচুরিপানার কারণে ধান উৎপাদন ও হ্রাস পাচ্ছে । বিশেষ করে নদ-নদীতে নৌচলাচল মারাত্মক ভাবে বিঘ্নিত হয়। জেলেদের মাছ শিকার করতে ও অসুবিধায় পড়তে হয়। জলে ভাসমান কচুরিপানা খুবই দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। কচুরিপানা প্রচুর পরিমাণে বীজ তৈরি করতে পারে। এ বীজ ৩০ বছর পরও অন্কুরোদগম ঘটাতে পারে। কচুরিপানা রাতারাতি বংশবিস্তার করে। প্রায় ১৪ দিনের মধ্যে কচুরিপানা দ্বিগুণ হয়ে যায়। আসলে জৈব সার তৈরি ছাড়া এই কচুরিপানা এখনো পর্যন্ত আমাদের তেমন কোন কাজে লাগানো যাচ্ছেনা। খালবিল, নদীনালা থেকে কচুরিপানা তুলে এনে জৈব সার তৈরি করাও কষ্টকর ও ব্যয় বহুল। এ কারণে জৈব সার তৈরি করতেও তেমন একটা দেখা যায়না। কিন্তু খাল-বিল- নদী- নালা, জলাশয় থেকে ক্ষতিকর কচুরিপানা পরিষ্কার করার তেমন কোন উদ্যােগও চোখে পড়ছেনা।
কচুরিপানার কারণে আমাদের দেশে অনেক আবাদী জমি অনাবাদিই থেকে যাচ্ছে। বর্তমানে গ্রামের কৃষক- জেলে- মাঝিদের কাছে কচুরিপানা যেন একটি আপদ ও বিড়ম্বনার নাম। অথচ বৃটিশ ভারতে কচুরিপানা আইন জারি করে কচুরিপানা পরিষ্কার করার মহতি উদ্যােগ গ্রহণ করা হয়েছিল।কচুরিপানার অতীত সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের একটু পেছনের ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করা প্রয়োজন। কচুরিপানা দক্ষিণ পাকিস্তানের সিন্ধের প্রাদেশিক ফুল। ধারণা করা হয় যে, ফুলের সৌন্দর্য প্রেমিক ব্রাজিলীয় এক পর্যটক ১৮ ‘শ শতাব্দীর শেষ ভাগে বাংলায় কচুরিপানা নিয়ে আসেন। এ কচুরিপানা খুবই দ্রুত বংশবিস্তার করতে থাকে। ১৯২০ সালের মধ্যে এ দেশের প্রায় প্রতিটি জলাশয়ে কচুরিপানায় ভরে যায়। নদ নদীতে নৌ চলাচল হয়ে উঠে দুঃসাধ্য।
আমন ধান, পাট চাষ অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ১৯৩৬ সালে বৃটিশ সরকার কচুরিপানা আইন জারি করে। এ আইনে বাড়ির আশপাশে কচুরিপানা রাখা নিষিদ্ধ করা হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযানে অংশ গ্রহণ নাগরিক কর্তব্য বলে ঘোষণা করা হয়। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে সবগুলো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতিহারে বাংলাকে কচুরিপানার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার অঙ্গীকার ছিল। এ নির্বাচনে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক বিজয় লাভ করে ইশতেহার অনুযায়ী দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নাগরিকদের সাথে নিয়ে কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযান পরিচালনা করা সময়ের জোড়ালো দাবীও বটে।
লেখকঃ মোঃ শামসুল হুদা লিটন, সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক।